অনেক দিন আগের কথা। ইতালির রোম নগরীতে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটেছিল। শহরের প্রহরীরা সিমন নামে এক বৃদ্ধকে রুটি চুরির অভিযোগে আটক করে। বিচারে সিমনকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়। মৃত্যুবরণ না করা পর্যন্ত অনাহারে কারারুদ্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় তাকে।
বৃদ্ধের যুবতী মেয়ে পেরো বাবার এই নিষ্ঠুর পরিণতি মেনে নিতে পারেনি। সে পোশাকের ভেতর খাবার লুকিয়ে দেখা করতে যায় তার বাবার সাথে। কিন্তু কারারক্ষীরা তার দেহ তল্লাশি করে খাবারগুলো কেড়ে নেয়। আর তাকে এই বলে সতর্ক করে যে, এরপর যদি এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে তাহলে তাকে আর তার বাবার সাথে দেখা করতে দেওয়া হবে না!
পিতা অন্তঃপ্রাণ পেরো ভিতরে গিয়ে দেখে তার বাবার হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। ক্ষুধা তৃষ্ণায় ছটফট করছেন তিনি। এমন করুণ দৃশ্য দেখার পর সদ্য মা হওয়া পেরো আর সহ্য করতে পারে না। বাবাকে বাঁচাতে তখনই নিজের বুকের দুধ পান করায় পেরো। এতে কিছুটা বল ফিরে পায় বৃদ্ধ।
বাবার জীবন রক্ষা করার তীব্র আকুলতা থেকে দিনের পর দিন এই কাজ করে যেতে থাকে পেরো। এদিকে দীর্ঘদিন অভুক্ত থাকার পরও সিমন কেন মারা যাচ্ছে না তা সবাইকে ভাবিয়ে তোলে। অবশেষে একদিন হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় পেরো।
কালবিলম্ব না করে উভয়কে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়। বিচারসভায় রোমের বিচারকগণ পুরো ঘটনা জেনে চরম বেদনা অনুভব করেন। ব্যাপারটিকে তারা মানবতার এক অনন্য এক দৃষ্টান্ত বলে রায় দেন। রায়ের পর শাসকগোষ্ঠীর মনে মানবতাবোধ জাগ্রত হয়। এরপর পেরো এবং তার বাবাকে বন্দীদশা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
হৃদয় নাড়া দেওয়া এই ঘটনা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এত বছর পর আজও একটি মেয়ের তার বাবার প্রতি ভালোবাসা কতটা গভীর তার আদর্শ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় পেরোকে। এবং সেই থেকে এই কথাটিও সর্বজন স্বীকৃত হয়ে যায় যে, কন্যাসন্তান আসলে মায়েরই আরেক রূপ!