জিলহজ্ব মাস হিজরী বছরের প্রসিদ্ধতম একটি মাস এবং হিজরী বছরের মর্যাদাপূর্ণ মাসগুলোর মাঝে অন্যতম মাস। আল্লাহ তায়ালা এই মাসের প্রথম দশ দিনের মাঝে বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলত রেখেছেন। জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের ভিতরে ইবাদত বন্দেগী করা আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক দামী এবং ফজিলতপূর্ণ।
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলেন, وَالفَجرِ .وَلَيَالٍ عَشرٍ অর্থ : শপথ ফজরের এবং দশ রাতের। সুরা ফাজর: ১-২
রাসুলুল্লাহ সাঃ হাদীস শরিফেও জিলহজ্বের প্রথম দশ দিনের অনেক ফজিলত ও মর্যাদার কথা বর্ণনা করেছেন।
অর্থ : রাসুলুল্লাহ সাঃইরশাদ করেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং ফজিলতপূর্ণ।ইবনে হিব্বান:৩০২
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে,
أَفْضَلُ أَيَّامِ الدُّنْيَا الْعَشْرُ، يَعْنِي عَشْرَ ذِي الْحِجَّةِ অর্থ: রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, পৃথিবীর দিনসমূহের মাঝে সবচেয়ে উত্তম এবং উৎকৃষ্ট দিন হচ্ছে জিলহজের প্রথম দশ দিন। তারতিবুল আমালি: ১৬৮৭
জিলহজ মাসের প্রথম দশকে ইবাদত বন্দেগী করা আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক প্রিয়। যার কারণে এ দিনসমূহের আমলের উপর অনেক বেশী সওয়াব দেওয়া হয়। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
অর্থ: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলার কাছে জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের নেক আমল যতটুকু প্রিয় এবং মর্যাদাপূর্ণ, অন্য কোন দিনের আমল ততটুকু প্রিয় এবং মর্যাদাপূর্ণ নয়। সুতরাং তোমরা এ দিনগুলোতে বেশি বেশি সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার পড়। তারতিবুল আমালি: ১৭৪৫
অপর এক হাদিসের বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم “ مَا مِنْ أَيَّامٍ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ أَنْ يُتَعَبَّدَ لَهُ فِيهَا مِنْ عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ يَعْدِلُ صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ ”
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, জিলহজের প্রথম দশকে ইবাদত বন্দেগী করা আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। এর প্রতিটি রোযা এক বৎসর রোযা রাখার সমান সওয়াব রাখে। আর প্রতি রাতের ইবাদত শবে কদরের ইবাদতের সমান সওয়াব রাখে। তিরমিজি: ৭৫৮
আরাফার দিন তথা জিলহজ্বের নয় তারিখের রোজা। এই দিনে রোজা রাখার সর্বাধিক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন- আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহ পাকের কাছে আশাবাদী যে, তিনি এর দ্বারা এক বছর আগের এবং এক বছর পরের অর্থাৎ দুই বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।তিরমিজি: ৭৪৯
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলতেন আরাফার দিনের রোজা একহাজার দিন রোজা রাখার সমান সওয়াব রাখে। শুআবুল ঈমান : ৩৪৮৬
প্রথম দশ দিনের আরো কিছু আমল কুরবানি সবার উপর ওয়াজিব হয় না। ১০,১১,১২ই জিলহজ্ব যাদের কাছে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার নেসাব পরিমাণ মাল থাকবে তাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব হয়। সুতরাং যারা কোরবানি দেওয়ার উপযুক্ত নয়। সামর্থ্য না থাকার কারণে, তারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য কিংবা সওয়াব অর্জন থেকে বঞ্চিত হওয়া স্বাভাবিক। তাই সামর্থ্যহীন যেন এত বড় সওয়ার থেকে বঞ্চিত না হয়, এইজন্য জিলহজ্বের প্রথম দশকে আল্লাহ তাআলা এমন কিছু আমল নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা সঠিকভাবে আদায় করলে পূর্ণ কুরবানির সওয়াব পাওয়া যায়।
আমলগুলো হলো জিলহজ্বের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে নিয়ে কুরবানির পশু জবেহ করা পর্যন্ত নিজের চুল, নখ, নাভির নিচের লোম কাটা এবং গোঁফ ছোট করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। এ আমল করলে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে একটি পূর্ণ কুরবানির সওয়াব দান করবেন। সুতরাং সামর্থবানরা কোরবানি করার পাশাপাশি এই আমলটি করলে সে দুই কুরবানির সওয়াব পাবে। সুতরাং, সামর্থ্যহীনরাও এই আমলের মাধ্যমে কুরবানির সওয়াব অর্জন আশা করতে পারে, ইনশাআল্লাহ।